IQNA

শেইখ নিমর কে? কেন তাঁকে হত্যা করা হলো?

10:21 - January 06, 2016
3
সংবাদ: 2600056
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ শেইখ নিমর বাকের আন-নিমরের মৃত্যুদণ্ড গত ২ জানুয়ারি শনিবার কার্যকর করা হয়েছে। এরপর থেকেই শেইখ নিমর সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে কৌতুল সৃষ্টি হয়েছে। সবাই জানতে চান কেমন ছিলেন শেইখ নিমর? কেন তাঁকে হত্যা করা হলো?

জন্ম:

হিজরি ১৩৭৯ সাল মোতাবেক ইংরেজি ১৯৫৯ অথবা ১৯৬০ সালে সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের কাতিফের আওয়ামিয়াহ শহরে শেইখ নিমর বাকের আন-নিমর জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন:

সৌদি আরবে নিজ শহরে শিক্ষালাভের পর ধর্মীয় ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৮৯ সালে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আসেন। দীর্ঘ দশ বছর ধরে তিনি তেহরানের হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে অধ্যয়ন করেন। একপর্যায়ে তিনি হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেন।

এরপর শেইখ নিমর ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশি গবেষণার জন্য সিরিয়ায় যান। সেখানে হজরত যেইনাব (সা.আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন। তিনি মুজতাহিদ পর্যায়ে উন্নীত হন।

নিজ শহরে প্রত্যাবর্তন:

ইরান ও সিরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে নিজ শহরে ফিরে যান শেইখ নিমর। সেখানে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তরুণদের ধর্ম শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ নেন। তিনি আওয়ামিয়াহ শহরে ইসলামি কেন্দ্র আল-ইমামুল আল-কয়েম(আ.)প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ নিমর আন-নিমর ছিলেন স্পষ্টবাদী।

নির্ভয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলায় ২০১১ সালের আগেও তাকে দুই বার আটক করা হয়। সে সময় তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

ইসলামি গণজাগরণ:

২০১১ সালে কাতিফে ইসলামি গণজাগরণ শুরু হয়। তাতে সমর্থন দেন শেইখ নিমরএর পরের বছরই ২০১২ সালের ৮ জুলাই শেখ নিমর গ্রেপ্তার হন। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী।

এ সময় তার পায়ে চার বার গুলি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গুলিবিদ্ধ শেইখ নিমরকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয় নি। গ্রেপ্তারের পর কাতিফে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাতে কয়েক জন নিহত হয়।

মৃত্যুর সময় নিমরের বয়স ছিল পঞ্চাশের ঘরে। তিনি রাজতন্ত্রের নানা অপকর্মের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কখনোই অস্ত্র হাতে নেওয়ার জন্য উসকানি দেন নি। সৌদি আরবের তরুণদের মধ্যে তার সমর্থন রয়েছে। সমর্থন রয়েছে বাহরাইনেও। ইরানের জনগণও শেইখ নিমরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। অবশেষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবের রাজকীয় আদালতের মাধ্যমে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তার পরিবার জানিয়েছে, সৌদি আরবে বৈদেশিক অনধিকারচর্চাবাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের অভিযোগেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তার সমর্থকরা বলেছেন, শেইখ নিমর শুধু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষেই ছিলেন। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ পরিহার করেছিলেন।

২০১১ সালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেইখ নিমর বলেছিলেন, তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্রের বদলে জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ করাকেই পছন্দ করেন। বুলেটের চেয়েও তা বেশি শক্তিশালী। কারণ যদি অস্ত্র ব্যবহার করা হলে কর্তৃপক্ষই লাভ ঘরে তুলবে।

জুলুমের বিরুদ্ধে বক্তব্য:

শেইখ নিমর বলতেন, জুলুম জুলুমই। চাই আমি শিয়া হন কিংবা সুন্নি। আমাদের ওপর মজলুমদের সহযোগিতা করা ওয়াজিব। শিয়া-সুন্নি বলে কোন কথা নেই। জালেমদের সঙ্গে কোন বন্ধুত্ব নেই। জালেমদের আমরা প্রতিহত করবো।

আল্লাহ জালেমদের ভালবাসেন না। আমরা জালেমদের ভালবাসবো? এটা কিভাবে সম্ভব? আমাদের পক্ষ থেকে মজলুমদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। চাই সে বাহরাইনের হোক কিংবা ইয়েমেনের। জালেম শাসককে প্রতিহত করুন। যারা জালেমদের সহযোগিতা করে তাদের জন্য আল্লাহরে কোন প্রতিদান নেই।

মৃত্যু সম্পর্কে শেইখ নিমর:

আয়াতুল্লাহ নিমর বলতেন, আমরা কেন মৃত্যুকে ভয় করবো? মৃত্যুকে ভয় করা আমাদের উচিত নয় বরং এটা আমাদের ঈমানকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আমাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। আমরা কেন ইমাম হোসেন (আ.)র আত্মা আর রক্ত থেকে উৎসাহ গ্রহণ করি না।


প্রকাশিত: 3
পর্যালোচনা করা হচ্ছে: 0
প্রকাশযোগ্য নয়: 0
gtdghwro
0
0
20
asdnrqeb
0
0
20
nhbeaytb
0
0
20
captcha