IQNA

রাসুল (সা.)-এর অবমাননার শাস্তি

10:08 - June 10, 2022
সংবাদ: 3471966
তেহরান (ইকনা): পৃথিবীর যেকোনো ভূখণ্ডে শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ, নবী ও সাহাবিদের সম্মান রক্ষার্থে অত্যন্ত কঠোর আইন অত্যাবশ্যক।
অন্যথায় কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটালে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ও ক্রোধে ফেটে পড়বে। শুরু হবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। সূত্রপাত ঘটবে মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনার।
 
বিপর্যস্ত হবে মানবতা, ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।
কোরআনের আলোকে নবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি
 
(১) ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৭)
 
(২) ‘তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে, তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৩)
 
(৩) ‘আর যে হিদায়াত পাওয়ার পর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৫)
 
হাদিসের আলোকে নবী (সা.)-এর অবমাননার শাস্তি
 
(১) কাব বিন আশরাফ নামের একজন ইহুদি যে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে নবী (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বেড়াত। এমনকি মদিনায় ফিরে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-দের স্ত্রীদের ব্যাপারে বাজে কবিতা বলতে শুরু করে এবং কটূক্তির মাধ্যমে তাঁদের ভীষণ কষ্ট দিতে থাকে।
 
তার এ দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসুল (সা.) কাব বিন আশরাফকে হত্যার নির্দেশ দিলে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে কয়েকজন সাহাবি তাকে হত্যা করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২৮৫)
 
(২) আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (সা.) এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ গ্রন্থে ইমাম বুখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.)-কে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত। (বুখারি, হাদিস : ৪০৩৯, ৪০৪০)
 
নবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তির ব্যাপারে শরিয়াহর সিদ্ধান্ত
 
নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইবনে তাইমিয়া উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো—নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারী কাফির এবং তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে—
 
১.   রাসুল (সা.)-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী ব্যক্তি উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে।
 
২.   তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
 
৩.   তবে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দায়িত্ব শাসকদের।
 
৪.   শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা।
captcha