IQNA

ওফাত স্মরণ

বিস্ময়কর মুসলিম প্রতিভা ইমাম সুয়ুতি (রহ.)

19:09 - September 30, 2022
সংবাদ: 3472551
তেহরান (ইকনা): আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) ইতিহাসের এক বিস্ময়কর মুসলিম প্রতিভা। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি তাঁর অবদান রেখে গেছেন। যার সুবিশাল রচনাসম্ভার আজও মানুষের কাছে এক মহাবিস্ময়। নিম্নে আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো।
জন্ম ও পরিচয় : আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) ৮৪৯ হিজরির রজব মাসে (১৪৪৫ খ্রি.) মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম আবদুর রহমান ইবনে কামালুদ্দিন আবু বকর (রহ.)। পিতা তাঁর উপাধি নির্ধারণ করেন জালালুদ্দিন। তাঁর পিতা ছিলেন সময়ের একজন খ্যাতিমান আলেম। তিনি খলিফার রাজপ্রাসাদের ইমাম ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি রাজদরবারের প্রতিনিধিত্ব করতেন। বলা হয়ে থাকে, পিতার কুতুবখানায় (পাঠাগার) জন্ম হওয়ায় তাঁকে ‘ইবনুল কুতুব’ বলা হয়।
 
বেড়ে ওঠা : ইমাম সুয়ুতি (রহ.) ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদার উপাধি দেওয়া হয়েছিল ‘হুমামুদ্দিন’ (দ্বিনের ব্যাপারে দৃঢ়চিত্ত)। কেননা তিনি গবেষক আলেম ও আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর পিতাও ফিকহ (ইসলামী আইন বিজ্ঞান)-সহ বিভিন্ন শাস্ত্রে পারদর্শী। ফলে তিনি পারিবারিকভাবেই জ্ঞানচর্চার পরিবেশ লাভ করেন।
 
আল্লামা সুয়ুতি (রহ.)-এর পিতা ছিলেন হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.)-এর শিষ্য। তাঁর তিন বছর বয়সে তিনি মারা যান। ধারণা করা হয়, পিতা আল্লামা সুয়ুতিকে আল্লামা আস্কালানির মজলিসে নিয়ে যেতেন এবং তাঁর দোয়া ও সুদৃষ্টি কামনা করতেন। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) ছয় বছর বয়সে পিতাকে হারান। আট বছর বয়সে তিনি কোরআন হিফজ করেন। শৈশবে পবিত্র কোরআন ছাড়াও আরো বেশ কিছু কিতাব তিনি মুখস্থ করেন। যার মধ্যে উমদাতুল আহকাম, আল-মিনহাজুল ফারয়ি, আল-মিনহাজ ফিল উসুল, আলফিয়াতু ইবনে মালিক, মিনহাজুল বায়দাবি ইত্যাদি। ইমাম সুয়ুতি (রহ.) সময়ের বহু খ্যাতিমান আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। তাদের মধ্যে শায়খ শরফুদ্দিন মুনাভি ও শায় মুহিউদ্দিন কাফেজি (রহ.)-এর দীর্ঘ সান্নিধ্য লাভ করেন।
 
জ্ঞানার্জনে ভ্রমণ : ইমাম সুয়ুতি (রহ.)-এর বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই তিনি জ্ঞানার্জনের জন্য সফরে আলেমদের কাছে যান। তাদের মধ্যে শামস মুহাম্মদ মুসা হানাফি, ফখর উসমান মুকসি, ইবনে ইউসুফ প্রমুখ। তিনি তাঁদের সাক্ষাৎ লাভ করেন ইস্কান্দারিয়া, দিময়াত, ফুয়ুম ও মাহাল্লা অঞ্চলে। এ ছাড়া জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি পূর্ণ এক বছর মক্কায় অবস্থান করেন এবং মদিনা, শাম, মরক্কো ও গিনিতে সফর করেন। তিনি এসব অঞ্চলের প্রধান আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন।
 
শিক্ষকতা ও লেখালেখি : আল্লামা সুয়ুতি (রহ.) মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‘আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ’ বিষয়ে বই লিখে সমকালীন আলেমদের প্রশংসা কুড়ান। এই বয়সেই তিনি শিক্ষকতা ও ফাতাওয়া প্রদান করতে আরম্ভ করেন। ৮৭১ হিজরিতে তিনি কায়রোর জামিয়া শায়খুনিয়ার শায়খুল হাদিস পদ অলংকৃত করেন। কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে ইমাম সুয়ুতি (রহ.) নিভৃচারী হয়ে যান এবং লেখালেখিতে পূর্ণ মনোযোগ দেন।
 
রচনাবলি : ইমাম সুয়ুতি (রহ.) ছোট-বড় রচনার পরিমাণ পাঁচ শতাধিক। কেউ কেউ এটাকে সাত শতাধিক বলে দাবি করেছেন। তবে পাঁচ শতাধিক হওয়ার মতটিই বেশি দালিলিক। তাঁর বিখ্যাত সংক্ষিপ্ত তাফসির গ্রন্থ ‘জালালাইন’ উপমহাদেশের কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে পাঠ্য। তবে এটি তাঁর একক রচনা নয়।
 
 
 
ইমাম সুয়ুতি (রহ.)-এর রচনাবলির মধ্যে শরহু ইবনে মাজাহ, আত-তিব্বুন নববী, আল-আশবাহ ওয়ান-নাজায়ের, আল-হাবি লিল-ফাতাওয়া, তারিখুল খুলাফা, আল-জামিউল কাবির, তাবাকাতুল হুফফাজ, লুবাবুল হাদিস বিখ্যাত।
 
মৃত্যু : বিশ্ববিখ্যাত এই আলেম ১৯ জমাদিউল আউয়াল মোতাবেক ৩০ সেপ্টেম্বর ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে মিসরেই ইন্তেকাল করেন।
 
মাউদু ডটকম অবলম্বনে
captcha