IQNA

মা ফাতেমার মর্যাদা বর্ণনা শুধুমাত্র মজলিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না

0:12 - March 05, 2017
সংবাদ: 2602652
মা ফাতেমা হচ্ছেন রাসূলের অস্তিত্বের অংশ বিশেষ আর তিনি হলেন সর্ব যুগের নারীদের সর্দার। তিনি এত বেশী মর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে, তাঁর সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তাঁর অসন্তুষ্টি আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
মা ফাতেমার মর্যাদা বর্ণনা শুধুমাত্র মজলিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না
বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) ছিলেন রাসুল (সা.) এর ঔরসজাত একমাত্র কন্যা। কিন্তু রাসুল (সা.)এর ওফাতের পরে স্বর্গী সেই নারীর উপরে রাসুল (সা.) কতিপয় নামধারী সাহাবীরা ওহীর ঘরের দরজায় আগুন লাগিয়ে দেয় এবং উক্ত জ্বলন্ত দরজাটি লাথি মেরে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর শরীরের উপরে ফেলে দেয় যার ফলে তার গর্ভের সন্তান মহসীনের অকালে গর্ভপাত ঘটে এবং তিনি মারা যান। আর এভাবেই রাসুল (সা.)এর উম্মতরা তার রিসালাতের পারিশ্রমিক আদায় করে।

ইতিহাসে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর শাহাদতের উক্ত বিষয়টিকে অনেকেই ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন কিন্তু আজও পর্যন্ত তা ইতিহাসে, রেওয়ায়েতে এবং মুমিনদের অন্তর থেকে কেউ মুছে দিতে পারেনি। অনেকেই বিষয়টিকে তুচ্ছ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে থাকেন।

ঐতিহাসিক এবং মোহাদ্দিসদের হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.)এর শাহাদতের উক্ত ঘটনাটিকে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। কেননা সেই যুগের তথাকথিত সাহাবীরা হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর ঘরের দরজায় আগুন প্রজ্বলিত করে এবং জ্বলন্ত দরজার উপরে লাথি মেরে তা হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর উপরে ফেলে দেয় এবং ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)কে চাবুক দ্বারা আঘাত করতে থাকে। কিন্তু ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) রাসুল (সা.)এর নির্বাচিত খলিফাকে রক্ষার জন্য তাদের চাবুকের আঘাতকে সহ্য করতে থাকেন। যখন উক্ত ঐতিহাসিক এবং মোহাদ্দিসরা এ ঘটনাটির কুপ্রভাব সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে বিরত রাকে। (তালখিসে সাফি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭৬)

মাসউদী তার গ্রন্থে কিছু অংশ উল্লেখ করেন "فَوَجهُوا اِلی مَنْزلِهِ فَهَجَمُوا عَلَیْهِ وَ اَحْرَقُوا بابَهُ… وَ ضَغَطُوا سَیدَةَ النساءِ بِالْبابِ حَتی اَسْقَطَتْ مُحْسِنا” অতঃপর হজরত উমর এবং তার সঙ্গীরা হজরত আলী (আ.)এর ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাঁর ঘরের কাছে একত্রিত হয় এবং তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়তারা দরজার পাল্লা দিয়ে বিশ্ব নেত্রী [ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)]এর পাঁজরে আঘাত করার ফলে তাঁর অকালে গর্ভপাত হয় এবং হজরত মোহসীন মারা যান। (ইসবাতুল ওয়াসিয়া, পৃষ্ঠা ১৫৩)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত ফাতেমা (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ বিশেষ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর।

প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ফাতেমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে।

হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা.)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতেমার (আ.) উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবীর (সা.) আহলে বাইত (রা.)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট।

ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) বলেন, হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার চেয়ে অধিক ইবাদতকারী আর কেউ ছিল না। তিনি এত বেশি ইবাদতে দণ্ডায়মান হতেন যে তাঁর পদযুগলে কড়া পড়ে যেত। (বিহারুল আনওয়ার, ৩য় খণ্ড, পৃ: ৬১)

হাসান বসরী, যিনি একজন অধিক ইবাদতকারী এবং অতিশয় পরহেজগার মানুষ হিসাবে পরিচিত, তিনি হযরত ফাতিমা সম্পর্কে বলেন: নবীদুহিতা এত বেশি ইবাদতে মশগুল হতেন এবং নামাযের মেহরাবে দণ্ডায়মান হতেন যে, তাঁর পদযুগলে কড়া পড়ে গিয়েছিল।

শাবিস্তান

captcha