IQNA

উগ্রপন্থীদের সুপথে ফেরাতে কারাগারে মুসলিম বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া

20:35 - December 06, 2018
সংবাদ: 2607459
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিজ পিতা দ্বারা বর্জিত হয়ে ইমরান ক্রোধ এবং ঘৃণার সাগরে ডুবে ছিল এমনকি তার পিতা তাকে দেখতে পর্যন্ত আসে নি। কিন্তু এর পরেই তিনি আহমেদ কিলানির পরিচিত হন।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: আহমেদ কিলানি হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের কারাগার গুলোতে নিযুক্ত হওয়া চার জন মুসলিম ধর্ম বিশেষজ্ঞের অন্যতম।

তিনি সহ বাকি তিন জনকে এসব কারাগারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার অংশ হিসেবে যাতে তারা কারাগারে আটক কয়েদিদের কে আধ্যাত্মিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।

আহমেদ কিলানির সাথে আমাদের ১০ মিনিটের ফোন কলটি নিউ সাউথ ওয়েলসের কর্মকর্তাগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং তার সাথে কথা বলার অনুমতি পেতে আমাদের দুমাসের বেশী সময় লেগেছিল।

আহমেদ কিলানির কাজ সেখানে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন তার কাজ সমূহ জীবন পরিবর্তন কারী।

যখন কিলানি শেষ পর্যন্ত ইমরানের পিতাকে তার সাথে দেখা করার জন্য সম্মত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তখন ইমরান কিলানিকে একটি ছোট খাঁচায় তার হাত দুটো রাখতে বলেছিলেন।

কিলানি ইমরানের কথামত কাজ করতে কিছুটা দ্বিধা বোধ করেছিলেন কেননা এর পূর্বে ইমরান তাকে ‘ধর্ম ত্যাগী’ আখ্যা দিয়ে খুন করার হুমকি দিয়েছিল।

তিনি ইমরানের দিকে তার হাত জোড়া বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং মনে মনে এই ভয়ে ছিলেন যে, ইমরান হয়ত তার কবজি ভেঙ্গে দিবে। কিন্তু ইমরান মুসলিম সংস্কৃতির নিদর্শন সরূপ কিলানির হাতে চুমু খান।

আহমেদ কিলানির ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইমরান তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নিয়মিত নামায আদায় করা শুরু করেন। আর ইমরানই একমাত্র কয়েদী নয় যে সুপথে ফিরে এসেছে।

আহমেদ কিলানি যখন কারাগারে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন তিনি সেখানে এমন কিছু মুসলিম কয়েদিদের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন যারা বিশ্বাসের দিক থেকে অত্যন্ত উগ্রপন্থী ছিলেন।

আর এসকল উগ্রপন্থীদের মধ্যে আবদুল নামের একজনের নাম উল্লেখযোগ্য। আবদুল কিলানির কে দেখতে পেয়েই রাগে ফেটে পড়েন এবং কিলানি কে ‘বিক্রিত হওয়া মুসলিম’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

আহমেদ কিলানি বলেন- ‘আমি রক্ষণশীল মনোভাবের পরিচয় দিই এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের বিচার বিবেচনা ছাড়াই প্রচুর ভালোবাসার মনোভাব ব্যক্ত করি। আমি তাদের কে শুরু থেকেই বলাতে থাকি- আমার নীতি হচ্ছে যতক্ষণ অবধি আপনারা আমাকে ধর্ম-ত্যাগী হিসেবে না ডাকবেন এবং সম্মান প্রদর্শন করবেন, ততক্ষণ আমি খুশি মনে আপনাদের সাথে যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।’

ধর্ম কি উগ্রপন্থীদের রক্ষা করতে পারবে?

ড. জুলিয়ান ড্রাগন যিনি সহিংস উগ্রপন্থা সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ, তিনি বিশ্বাস করেন- কারাগারে নিয়োগ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞগণ কয়েদিদের মধ্য থেকে উগ্রপন্থা দূর করতে পারবেন এবং তাদের কে পুনরায় সমাজে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।

তিনি বলেন- ‘ধর্ম এমনকি উগ্রপন্থীদের সাহস এবং সমর্থন দেয় যাতে করে তারা একটি ধর্মীয় সমাজে একটি ইতিবাচক দিক খুঁজে পায় আর একটি স্বাস্থ্যকর উগ্রপন্থা বহির্ভূত পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’

তথাপি, ড. জুলিয়ান বলেন- ‘যদি সমাজের মধ্যে গতানুগতিক ধারা চলমান থাকে তবে জনগণ আবার উগ্রপন্থায় জড়িত হয়ে যেতে পারে।’

আক্রমণের শিকার হওয়া পরিবার সমূহ থেকে সমর্থন:

কারাগার গুলোতে মুসলিম বিশেষজ্ঞের নিয়োগ দেয়া একটি বিতর্কিত বিষয়। কিন্তু এখানে আটক ব্যক্তিদের দ্বারা আক্রান্ত অনেক পরিবার এ উদ্যোগের সমর্থন জানিয়েছে।

কিন্তু আলফা চেহেং নামের একজন বিদ্যালয় শিক্ষক যার পিতাকে ফারহাদ খলিল নামের ১৫ বছর বয়সী একজন বালক গুলি করে হত্যা করে মসজিদে প্রার্থনা করতে গিয়েছিল।

আলফা চেহেং বলেন- ‘একজন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি তরুণদের খুব কাছাকাছি থাকি, এটি সবসময় আমার মনে আঘাত করে যে, ঘাতক ছিল একজন ১৫ বছর বয়সের কিশোর।’

তিনি বলেন- ‘এটি সত্যিই একটি বিয়োগান্তক ঘটনা যে, এ বয়সের কেউ একজন যে কিনা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের একজন যে বিশ্বাস করে তার এমন কাজই হচ্ছে একটি সমাধান।’

সকলেই পরিবর্তনযোগ্য:

আহমেদ কিলানির আধ্যাত্মিক কাজের ভিত্তিমূলে রয়েছে একটি বিশ্বাস আর তা হচ্ছে- সকল অপরাধীর আচরণ খুবই জটিল হয়ে থাকে এবং কার্যকরী পুনর্বাসন আর দক্ষ দিকনির্দেশনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।

আহমেদ কিলানি বলেন- ‘তারা সেইসমস্ত মানুষ যারা হয়তো আপনার সাথে বিদ্যালয়ে গিয়েছিল, আপনার সাথে কোনো সময় কাজ করেছিল এবং আপনার সাথেই একসময় বাসে চড়েছিল। তাদের সন্তানেরা হয়তো আপনার সন্তানদের সাথেই বিদ্যালয়ে যায়। তার হতে পারে আপনার প্রতিবেশী কেউ।’

‘সকলেই ভুল করে থাকে এবং সকলেই পরিবর্তিত হতে পারে। আমাদের উচিত তাদের কে পরিবর্তন হওয়ার জন্য সুযোগ দেয়া।’ এবিসি ডট নেট ডট এইউ।

captcha