তেহরান (ইকনা): আমার মনে হয়, আমি সব সময় মুসলিম ছিলাম। ’
লেডি এভলিন মারে কোবোল্ড একজন ভ্রমণপিপাসু ও ক্রীড়াপ্রেমী অভিজাত স্কটিশ নারী। ভিক্টোরিয়া যুগে অভিজাত ব্রিটিশ পরিবারের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮৭৬ সালে স্কটল্যান্ডের এডেনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন।
ইসলামের সংস্পর্শে : এভলিনের বাবা প্রতিবছর শীতকাল কাটাতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে যেতেন। বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ঘটে এভলিনের। শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স ও মিসরের রাজধানী কায়রোতে কাটিয়েছেন। সেখানেই তিনি আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। স্থানীয় সমবয়সী মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে তিনি মসজিদে ঘুরে বেড়াতেন।
মুসলিম পরিচয়ের ঘোষণা : জয়নব ১৯১৫ সালে প্রথমবার প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের কথা জানান। তিনি লেখেন, ‘কয়েক বছর অতিবাহিত হয়। একবার আমি ইতালিয়ান বন্ধুদের সঙ্গে রোমে ছিলাম। আমার এক বন্ধু জানাল, আমি চাইলে পোপের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পারব। বন্ধুর কথা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা। অতঃপর পোপের সঙ্গে দেখা করি। কথার মধ্যে হঠাত্ পোপ জানতে চাইলেন আমি ক্যাথলিক কি না? তাঁর প্রশ্ন শুনে বিস্ময়াভিভূত হই। কিছুক্ষণ পর বললাম, আমি একজন মুসলিম। অনেক বছর ধরে আমি ইসলাম নিয়ে কিছুই ভাবিনি। হঠাত্ এক আলোকরশ্মি জ্বলে ওঠে। এরপর আমি এই বিশ্বাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ’
সৌদির সহায়তায় হজের চেষ্টা : ১৯২৯ সালে ৬২ বছর বয়সে জয়নব হজে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত হেজাজ ও নাজদের রাষ্ট্রদূত হাফিজ ওয়াহবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়াহবা সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজের কাছে এই বিষয়ে পত্র লেখেন। তখন ইউরোপীয়দের মক্কায় প্রবেশে অনেক বিধি-নিষেধ ছিল। কিন্তু তাঁকে উন্নত সুযোগ-সুবিধাসহ হজ পালনের অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৯৩৩ সালে মিসরের সুয়েজ সিটি থেকে হজের দীর্ঘ ভ্রমণ শুরু করেন। সেখান থেকে তাওফিক বন্দরে গিয়ে জেদ্দাগামী ফেরিতে চড়েন। চার দিন ফেরি চড়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি জেদ্দায় গিয়ে পৌঁছেন।
কাবাঘর দেখার অনুভূতি : মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে পৌঁছে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি লেখেন, ‘আমি মসজিদুল হারামে অবস্থান করছি। কয়েক মুহূর্ত মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমরা সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান আল্লাহর ঘরের চারপাশে হাঁটছি। এমন দৃশ্যের চিত্রায়ণের জন্য উপযুক্ত কলমের প্রয়োজন। সুবিশাল সৃষ্টিজগতের মধ্যে আমি অতি সামান্য এক জীব। তখন যেন আমি মহান স্রষ্টার আধ্যাত্মিক প্রবল ঢেউয়ের মধ্যে দোল খাচ্ছি। ’
হজের ভ্রমণ নিয়ে বই রচনা : মক্কা ভ্রমণ ও হজ পালন নিয়ে জয়নব একটি বই লেখেন। একজন ব্রিটিশ নারীর হজ পালনের স্মৃতি নিয়ে এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম বই। ১৯৩৪ সালে ‘দ্য পিলগ্রিমেজ টু মক্কা’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে হজের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, নিজের মুসলিম হওয়া ও হজ পালনের কথা তুলে ধরেন তিনি। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ নিয়ে তাঁর আরেকটি বই হলো, ‘ওয়েফার্স ইন দ্য লিবিয়ান ডেজার্ট’।
মৃত্যু : হজ পালনের ৩০ বছর পর ৯৬ বছর বয়সে জয়নব স্কটল্যান্ডে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর জানাজার নামাজ পড়ানোর জন্য স্কটল্যান্ডে কোনো মুসলিম ছিল না। অতঃপর ইংল্যান্ডের ওকিং মসজিদে যোগাযোগ করে তাঁর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর অন্তিম ইচ্ছামতো এলাকার মক্কা অভিমুখী একটি পাহাড়ে তাঁকে দাফন করা হয়।
মহান আল্লাহ তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং ভালো কাজ কবুল করুন। আমিন।
সূত্র : হেরিটেজ টাইমস, আরব নিউজ, মুসলিম কনভার্টস স্টোরিজ