ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, পরিবেশগত অবস্থার প্রতি মানুষের সাধারণ এবং ক্রমাগত মনোযোগ এবং দরিদ্রদের অবস্থার বিষয়ে জ্ঞান ও যত্ন ব্যতীত, অভাবীদের অবস্থার উন্নতির কোন আশা করা যায় না। এই বিষয়টি এমন একটি বিষয় যা পবিত্র কুরআনে এত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং এরকম বিস্তারিতভাবে অন্য কোন বিষয় আলোচনা করা হয়নি। পবিত্র কুরআনে এর সমাধান হিসেবে "ইনফাক" নামে একটি ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে। ইনফাক শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল গর্ত ভরাট করা এবং এর পরিভাষায় অর্থ হচ্ছে আর্থিক ঘাটতি পূরণ করা এবং দূর করা। ইনফাক বলতে শুধুমাত্র অর্থ ও ধন-সম্পদ ব্যয় করাকেই বোঝায় না, বরং ইনফাক অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার পাশাপাশি জ্ঞান, সম্মান ও পদমর্যাদাও অন্তর্ভুক্ত করে।
দানের প্রভাব কারো কাছে গোপন নয়, তাদের মধ্যে আমরা সম্পদের সমন্বয় এবং শ্রেণীগত পার্থক্য হ্রাস, প্রেমের সৃষ্টি, উদারতার চেতনার বিকাশ এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকে নির্দেশ করে। এই মতবাদটি কুরআনের অনেক আয়াতে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে এই কর্মের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে:
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা রাতে ও দিনে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহর পথে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের জন্য এর প্রতিদান (ও সওয়াব) তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে এবং (কিয়ামতে) না তাদের কোন প্রকার ভয় হবে, আর না তারা দুঃখিত হবে।
সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৪।
পবিত্র কুরআনে এই অনুচ্ছেদটি ইনফাকের আয়াত হিসাবে পরিচিত। এই আয়াতের মাধ্যমে যারা সব পরিস্থিতিতেই দান করে, তাদের জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের লোকেরা দারিদ্র্য এবং কষ্টকে ভয় পায় না, কারণ তারা মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে এবং তাঁর উপর আস্থা রাখে এবং দানের কারণে তারা দুঃখ বোধ করে না, কারণ তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দানের পরবর্তী জীবনের প্রভাবের দিকে মনোযোগ দেয়।
বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি গবেষক আয়াতুল্লাহ মোহসেন ক্বারায়াতি তার তাফসির নূরে বলেছেন: এই আয়াতটি পূর্ববর্তী চৌদ্দটি আয়াতের সংক্ষিপ্তসার যা দাতব্য সম্পর্কে আলোচনা করেছে। যে কারণে রাতের চেয়ে দিন এবং গোপনের চেয়ে প্রকাশ্য প্রাধান্য পেয়েছে, ঠিক সেই একই কারণে গভীর রাতে ইনফাক বা দান করার গুরুত্ব অনেক বেশী এই বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন যে ইসলামের দান-খয়রাতের বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার অর্থ ভিক্ষাবৃত্তি এবং ভিক্ষার প্রচলন নয়। কারণ অনেক বর্ণনায় একদিকে যারা প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তাদের নিন্দা করা হয়েছে, অন্যদিকে অর্থ প্রদানের পরিবর্তে কাজের আঞ্জাম দেওয়ার মধ্যে সর্বোত্তম প্রকার ব্যয়ের প্রচলন করা হয়েছে।
আয়াতের বার্তাসমূহ:
১- অস্থায়ী ও সীমিত নয় এবং করুণার বাইরে নয়, উদারতা এবং উদারতার মনোভাব থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ «يُنْفِقُونَ» ‘ইউনফিকুন’ অর্থ কাজের ধারাবাহিকতাকে বোঝানো হয়েছে।
২- ইনফাকের জন্য খোদায়ী পুরস্কার নির্ধারণ না করা তার পরিধির লক্ষণ। «أَجْرُهُمْ» "তাদের পুরস্কার"।
৩- মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মানুষের ভাল কাজের জন্য সর্বোত্তম প্রণোদনা। «فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ» "তাদের জন্য এর প্রতিদান (ও সওয়াব)"।
৪- ইনফাক বা দানের অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা। «لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَ لا هُمْ يَحْزَنُونَ» না তাদের কোন প্রকার ভয় হবে, আর না তারা দুঃখিত হবে।
তাফসীরকারদের মতে, এই আয়াতের সঠিক উদাহরণ হল আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) চরিত্র এবং আয়াতটি তাঁর উত্তম কর্মের উপলক্ষ্যে অবতীর্ণ হয়েছে।