এটি সেনেগাল ও পশ্চিম সাহারা; মালি ও আলজেরিয়ার মধ্যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সীমানায় অবস্থিত। মৌরিতানিয়া নামটি প্রাচীন ‘বারবার’ মৌরি উপজাতি এবং তাদের রাজ্য মৌরতানিয়া থেকে এসেছে। মৌরিতানিয়ায় মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৪৪ লাখেরও বেশি, যার প্রায় শতভাগ জনগণ মুসলিম। মৌরিতানিয়ার সংবিধান দেশটিকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এবং ইসলামকে নাগরিক ও রাষ্ট্রের একমাত্র ধর্ম হিসেবে মনোনীত করে।
মৌরিতানিয়ার মুসলমানরা ধর্মভীরু। দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মৌরিতানিয়া সাংবিধানিকভাবে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। এ দেশের মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।
এ দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মান এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হলেও তারা ভীষণ রকম ধর্মপরায়ণ।
মৌরিতানিয়ার আইনি ব্যবস্থা ফরাসি নাগরিক আইন এবং শরিয়া আইনের মিশ্রণ। ইসলাম ও ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি বিশেষভাবে কঠোর।
সেখানে কিছু অপরাধের জন্য শরিয়া আইনের প্রয়োগ আছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের আইন ধর্মত্যাগকে নিষিদ্ধ করে এবং এটিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে।
মৌরিতানিয়ায় পাবলিক স্কুল ও প্রাইভেট সেকেন্ডারি স্কুলে প্রতি সপ্তাহে চার ঘণ্টা ইসলামী শিক্ষা প্রদান করতে হয়। স্নাতক চাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরবিতে ধর্মীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।
এখানকার জীবনাচারের সঙ্গে আরব ইসলামী ঐতিহ্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মানুষ কথা বলে আরবিতে। চলনে-বলনেও তারা পুরোপুরি আরব। মৌরিতানিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি উন্নয়নশীল মুসলিম দেশ। আরব দুনিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবি। ভাষা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে আরবদের মতো হলেও বর্তমান আরবদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সখ্য নেই। নেই উচ্চাভিলাষী চাহিদা ও সামর্থ্যও।
মৌরিতানিয়ায় শিক্ষাবর্ষ অক্টোবরে শুরু হয় এবং জুনে শেষ হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের বয়স হলো ছয় বছর। দেশটিতে প্রচুর মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র আছে। ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের আছে প্রবল ঝোঁক।
মৌরিতানিয়া খনিজ, হাইড্রোকার্বন এবং মত্স্য সম্পদের উল্লেখযোগ্য মজুদসহ একটি সম্পদসমৃদ্ধ দেশ হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মৌরিতানিয়ার অর্থনীতি এখনো মূলত কৃষি ও পশুসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির হাজার হাজার বছর আগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে এবং সেখানে আছে বেশ কিছু সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থান। যেমন—চিনগুয়েত্তি শহর, যা তার প্রাচীন গ্রন্থাগার এবং মসজিদের জন্য পরিচিত; প্রাচীন শহর Ouadane এবং আদ্রার নআচকাউফের প্রাগৈতিহাসিক রক আর্ট সাইট। মৌরিতানীয়রা মালেকি মাজহাবের অনুসরণ করে।
দেশটি ২৮ নভেম্বর ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। মুসলিম বণিকদের সঙ্গে বাণিজ্যবহর ও ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে অষ্টম শতাব্দীতে এই অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। প্রারম্ভিক মুসলমানরা মূলত খারিজি এবং ইবাদি ছিল, কিন্তু ১১ শতকের আলমোরাভিড সংস্কারবাদী এবং শিক্ষামূলক আন্দোলন নিশ্চিত করেছিল যে এই অঞ্চলের মুসলমানরা প্রধানত সুন্নি ইসলাম অনুসরণ করবে যেমনটি মালিকি স্কুল অব ল এবং আশরি ধর্মতত্ত্ব দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। মৌরিতানিয়ায় আছে মনোমুগ্ধকর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা প্রথম দেখাতেই দর্শনার্থীর দৃষ্টি কাড়ে।
মৌরিতানিয়া প্রায় শতভাগ মুসলমানদের দেশ। কিছুটা দারিদ্র্যপীড়িত হলেও তারা আঁকড়ে ধরে আছে সঠিক ইসলাম।